নিউজ ডেস্কঃ
নারীরা যদি হিজাব পালন না করে, তাহলে ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী তাদের ওপর শাস্তির বিধান আছে। কাজেই, এটাকে একপ্রকার বলপ্রয়োগই বলা চলে: আপনি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানবেন না, তো আখিরাতে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। এখানে তো বলপ্রয়োগই করা হলো, তাইনা?
এখন কেউ কেউ বলতে পারে, মুসলিম নারীরা স্বেচ্ছায় হিজাব করে। ঠিক আছে। হিজাবের ব্যাপারে মুসলিম নারীরা স্বেচ্ছায় ইসলামি অনুশাসন মেনে চলে, এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে শরীয়াহতে এই বিষয়ে বলপ্রয়োগের কোনো নীতিই নেই৷
ধরুন, আমি স্বেচ্ছায় রাস্তাঘাটের নিয়ম-কানুন মেনে চলি। এর অর্থ তো এটা না যে, সেক্যুলার রাষ্ট্র আমার উপর ট্রাফিক আইন বলে কোনো কিছু জারি-ই করেনি। (বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উদাহরণটা বুঝতে পারা হয়তো একটু কঠিন। বাইরের বিভিন্ন দেশে ট্রাফিক আইন অত্যন্ত কড়া। সেখানে ট্রাফিক নিয়ম না মানলে ভালো অংকের জরিমানা হয়। এমনকি লাইসেন্সটা পর্যন্ত বাতিল হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ বলপ্রয়োগ করে হলেও মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করা হচ্ছে।) অন্যান্য যেকোনো বিধিনিষেধের বেলাতেও একই কথা খাটে, রাষ্ট্র আমাদের উপর নানা ধরণের আইন-কানুন জারি করেছে।
দ্বিতীয়ত, ইসলামি রাষ্ট্রে বা খিলাফত ব্যবস্থায়, কোনো নারী যদি হিজাব পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ করে হলেও হিজাব কার্যকর করা হবে। এটাই ইসলামের নীতি।
কোনো ব্যক্তি যদি মদ খায়, যিনা-ব্যভিচার করে, কিংবা রিবা অর্থাৎ সুদের আদান-প্রদানে জড়িত থাকে, সেক্ষেত্রেও একই কথা। ইসলামী কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বাধা দেবে, এবং বলপূর্বক এ কাজগুলো বন্ধ করবে।
আইনের শাসন কায়েম করার জন্য বলপ্রয়োগ করাটা কি আসলেই দোষের কিছু? নিশ্চয়ই না। একটা সমাজকে টিকে থাকার জন্য কোনো না কোনো মাত্রায় বলপ্রয়োগ করতেই হয়। কাজেই, যারা শুধুমাত্র এই কারণে ইসলামের দিকে আঙ্গুল তোলে যে, “ইসলাম বলপ্রয়োগ করে”– তাদের এই খোঁড়া যুক্তি একেবারেই অর্থহীন।
প্রত্যেক লিগাল সিস্টেমের মতো, ইসলামও কিছু ক্ষেত্রে মানুষকে নিজের ইচ্ছেমতো চলার অনুমতি দেয়, আর কিছু ক্ষেত্রে নিজের খেয়াল-খুশিমতো চলার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এখন প্রশ্ন হলো, এই অনুমোদন বনাম নিষেধাজ্ঞা — এগুলো যুক্তিসঙ্গত কিনা৷ ইসলামি শরীয়াহর ব্যাপারে এর উত্তর হলো, হ্যাঁ। অবশ্যই এগুলো যুক্তিসঙ্গত। বরং এমন বহু লিবারেল সেক্যুলার রাষ্ট্র আছে, যাদের অনুমোদিত ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যৌক্তিকতার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অবাধ যৌন-স্বাধীনতার কথা। মানুষ যে যার ইচ্ছেমতো অবাধে যৌন মেলামেশা করবে, এটা কি সত্যিই ভালো কোনো ফল বয়ে আনে? বলা বাহুল্য, মানবজাতির ইতিহাসে ব্যক্তি-স্বাধীনতার নামে এত জঘন্য আর ধ্বংসাত্মক উদাহরণ বোধ হয় আর কিছুই নেই।