নিউজ ডেস্ক:
তেলযুক্ত মাছে পাওয়া যায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছসহ অন্যান্য বড় মাছে পেয়ে যাবেন তেল। নানাভাবে মাছের তেল আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তবে ফিশ অয়েল ক্যাপসুল খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
বেশি তেল যুক্ত মাছ খাওয়া কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? মাছের উপর করা প্রায় প্রতিটি গবেষণাতেই দেখা গেছে শরীর এবং মস্তিষ্ককে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখতে মাছের কোনো বিকল্প হয় না।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় মাছের তেল। নিয়মিত এটি খেলে তাই অকালে হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে।রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে মাছের তেল। এছাড়া শরীরের জন্য উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। হাড় শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে। টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় মাছের তেল। রিউমাটোয়িড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। ত্বক ভালো রাখে। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে মাছের তেল। লিভারে জমে থাকা চর্বি দূর করে।
শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে এও প্রমাণ করেছেন যে বেশি তেল যুক্ত মাছ খেলে শরীরের আরো উপকার হয়, বিশেষত শীতকালে যদি এমন ধরনের মাছ খাওয়া যায়, তাহলে নাকি ত্বকের নানাবিধ উপকার হয়। সেই কারণেই তো শীতপ্রধান দেশে বেশি মাত্রায় সামদ্রিক মাছ খাওয়ার চল রয়েছে।
কিন্তু কী কারণে মাছের এত কদর বলতে পারেন? আসলে মাছের ভেতরে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন এবং আরও সব পুষ্টিকর উপাদান একদিকে যেমন ব্রেন ফাংশনের উন্নতি ঘটায়, তেমনি অন্যদিকে চোখ এবং লিভার সহ শরীরের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, অতিরিক্ত তেল যুক্ত মাছ খাওয়া অভ্যাস করলে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন:-
(১) ত্বকের সুন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
শীতকালে এমনিতেই আদ্রতা কমে যাওয়ার কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে পরিবেশ দূষণের মারাত্মক ক্ষতি হয় স্কিনের। এমন পরিস্থিতিতে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিতে পারে একমাত্র মাছ। কারণ এর শরীরের ভেতরে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড, এসেনশিয়াল অয়েল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোনও ধরনের ক্ষতি হতে দেয় না। সেই সঙ্গে স্কিনের ভেতরে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে সার্বিকভাবে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এই শীতে ত্বকের লাবণ্য বজায় রাখতে চান, তাহলে ভুলেও মাছ খাওয়া ছাড়বেন না যেন!
(২) হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
আমেরিকান জার্নাল অব কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে শরীরে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে একিদেক যেমন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে, তেমনি হার্টের ভেতরে কোনো ধরনের ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক সহ নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তেলযুক্ত মাছ খেলে রক্তচাপও কমতে শুরু করে। ফলে হার্টের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না।
(৪) ব্রেন পাওয়ার বাড়ে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মাছের ভেতরে থাকা একাধিক উপাকারি উপাদান ব্রেনের বয়স বাড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে কগনিটিভ ফাংশন এতটা মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে স্মৃতিশক্তি সহ বুদ্ধির জোরও বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত, অ্যালঝাইমারস এবং ডিমেনশিয়ার মতো ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতেও মাছেরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো বয়স্ক মানুষদের বেশি করে মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
(৫) দৃষ্টিশক্তি বাড়তে থাকে:
আমার মতো আপনিও নিশ্চয় সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসছেন যে মাছ খেলে চোখের ক্ষমতা বাড়ে? এই কথাটা যে বেজায় নির্ভুল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আসলে মাছের শরীরে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের ভেতরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ধীরে ধীরে চোখের ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। তাই তো বাজার করতে গেলে ব্যাগ ভর্তি করে রুই-কাতলা কিনতে ভুলবেন না যেন! ইচ্ছা হলে ভোলা বা ভেটকির মতো মাছও কিনতে পারেন। কারণ এদের শরীরেও প্রচুর পরিমাণে তেল থাকে।
(৬) হাড় শক্তপোক্ত হয়:
বুড়ো বয়সে জয়েন্ট পেনের কারণে শয্যাশায়ী হতে না চাইলে নিয়মিত মাছ খাওয়া শুরু করুন। কারণ মাছের শরীরে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন ডি। এই ভিটামিনটি হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করার পাশাপাশি একাধিক বোন ডিজিজকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বেশি তেলষুক্ত মাছ শরীরের জন্য ভাল না খারাপ? আশা করি এই উত্তর পয়ে গেছেন এখন।