ক্ষমা প্রার্থনার মাস রমজান

ক্ষমা প্রার্থনার মাস রমজান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রমজান মাগফেরাতের মাস। এ মাসের রোজায় মানুষ ক্ষমা পায়। রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর ভয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। আর আল্লাহর ভয় মানুষকে নিষ্পাপ গুনাহমুক্ত জীবন লাভে সহায়তা করে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা রমজানের সিয়াম সাধনার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ

হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে। অনুরূপ তোমাদের আগের লোকদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।‘ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৩)

আল্লাহর ভয় অর্জন করার অর্থই হলো ইসলামের বিধি-বিধানগুলো যথাযথ আদায় করা। যখনই ইসলামের বিধানগুলো যথাযথ পালিত হবে তখনই মানুষ আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও রমজানের সিয়াম সাধনায় গুনাহ মাফের সুসংবাদ দিয়েছেন। পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় যদি রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করে তবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। হাদিসে এসেছে

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ايْمَانًا وَ اِحْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَا تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ

যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করেতার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।‘ (বুখারি ও মুসলিম)

অনেকেই গুনাহ মাফ বলতে ছোট ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি বুঝিয়েছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে হজরত ইবনু হাজার আল-আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ‘হাদিসের বাহ্যিক অর্থ সগিরা-কবিরা তথা ছোট-বড় সব গুনাহকেই অন্তর্ভূক্ত করে। তাঁর এ মতকে অনেকেই সমর্থন করেন।’

তবে অনেকে বলেছেন কারো আমলনামায় সগিরা গুনাহ না থাকে আর যদি কবিরা গুনাহ থাকে তবে আল্লাহ ওই ব্যক্তির বড় গুনাহগুলো হালকা করে দেন।’ (ফতহুল বারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত একান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করা। গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া। তবেই আল্লাহ বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।

রমজানের রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে ছোট ছোট আবেদনগুলো বেশি বেশি করা। যা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করেছেন-

رَبِّ اغْفِرْلِىْ وَتُبْ عَلَيَّ اِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُوْرُ

উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফিরলিওয়া তুব আলাইয়্যাইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুল গাফুর।

অর্থ: পরওয়াদেগার! তুমি আমাকে মাফ কর এবং আমার তাওবা কবুল কর। কেননা তুমি হলে তাওবা কবুলকারী এবং ক্ষমাকারী। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)

অতপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম-এর ঐতিহাসিক ক্ষমা লাভের দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

উচ্চারণ: রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।

অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি  অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে হেদায়েত চাই, আপনার ভয় চাই, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি চাই, সচ্ছলতা কামনা করি।’

পবিত্র রমজান মাসে মুমিন বান্দা তাদের গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করতে পারলেই বছরের বাকি এগারোটি মাস এ সিয়াম সাধনার ফল ভোগ করবে। সে জন্য বেশি বেশি তাওবাহ করা জরুরি।

হে আল্লাহ! আপনি মুমিন মুসলমান রোজাদারের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন। দুনিয়ার যাবতীয় বিপর্যয়, মহামারি রোগ-ব্যধি, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Loading

পোষ্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করতে পারেন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!