নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সারাদেশে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামের অস্থিরতা নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) খামারিরা।
তারা বলছেন-বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৬৭ টাকা, যেখানে খামারি বিক্রি করছে ১৯০-২০০ টাকায়। ঢাকার বাজারে এই মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা পর্যন্ত দামে। কিন্তু এই দামটা যৌক্তিক পর্যায়ে নেই। এছাড়া প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১১.৭১ টাকা, যেখানে খামারি লোকসান দিয়ে বিক্রি করছে ৯.৪৫ টাকায়। এটাও যৌক্তিক দামে বিক্রি হচ্ছে না। এই অবস্থার অবসানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপে ডিম ও মুরগির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানান খামারিরা।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান খামারি নেতারা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন।
অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ডিম ও মুরগির মাংসের খুচরা দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন খামারিরা ভালো দাম না পাওয়ার কারণে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে ১.৫৮ লাখ খামারের মধ্যে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে লোকসানের কারণে।
ফলে প্রতিদিনের মুরগির উৎপাদন সক্ষমতা ৫ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন থেকে কমে ৪ হাজার ২১৯ মেট্রিক টন নেমেছে। অর্থাৎ মাংসের উৎপাদন কমেছে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। একইভাবে ডিমের উৎপাদন প্রতিদিন ৬ দশমিক ৬৪ কোটি পিস থেকে কমে ৪ দশমিক ৩২ পিসে নেমেছে। যেখানে উৎপাদন কমেছে ২৫ ভাগ।
খন্দকার মো. মহসিন বলেন, দীর্ঘদিন লোকসানের কারণেই খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন যারা আছে তারা কিছুটা লাভ পাচ্ছে। বাজারে যে দাম সেটাও যৌক্তিক না, আমরা চাই এই অস্থিরতা না থাকুক।
এ কারণে ২০১০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে যে দাম নির্ধারণ কমিটি করা হয়েছে, তাদের কাছে দাবি তারা উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে মাসে অন্তত দু’বার যেন যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়। তাতে করে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।
দাম নির্ধারণে ২০১০ সালে কমিটি হলেও সেই কমিটি অকার্যকর হয়ে আছে বলে খামারি নেতারা দাবি করেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার মনির আহম্মেদ বলেন, এখন মুরগির যে উৎপাদন খরচ, তার থেকে ১০-১৫ টাকা লাভে বিক্রি করলে সেটা হবে যৌক্তিক দাম। এছাড়া একটা ডিমের উৎপাদন খরচ থেকে ২৫-৫০ পয়সা বেশি হলেই খামারিরা টিকে থাকতে পারবে। এ জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। কারণ ফিড, বিদ্যুৎ বিল, মেডিসিনসহ সব কিছুর দামই এখন চড়া। এই অবস্থায় সরকারের উচিত আসলে দাম কত হওয়া দরকার সেটা বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে অ্যানালাইসিস করা।