নার্সিং শিখলে দেশ-বিদেশ কর্মসংস্থান হবে

নার্সিং শিখলে দেশ-বিদেশ কর্মসংস্থান হবে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

দেশের যুবসমাজকে নার্সিং পেশায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই পেশার মাধ্যমে উন্নত সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যাবে। তিনি জানিয়েছেন, এই পেশা দিয়ে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও কর্মসংস্থান সম্ভব।

বাসস জানায়, বুধবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুরে ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজ’ এর দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় কলেজের ২১০ জন স্নাতকধারীর মধ্যে সনদ বিতরণের পাশাপাশি অসামান্য অ্যাকাডেমিক রেকর্ডের জন্য ছয়জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে ‘প্রাইম মিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন তিনি।

ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি দেশের যুব সমাজকে নার্সিং শিক্ষা গ্রহণ এবং সেবায় নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানচ্ছি। নার্সের শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান হবে।”

তিনি বলেন, সবসময় এটা মনে রাখতে হবে, যারা আজকে গ্র্যাজুয়েট হলেন, ডিগ্রি পেলেন, তাদেরকে জনগণকে সেবা দেওয়ার কথা সবসময় মনে রাখতে হবে। একজন রোগী চিকিৎসা এবং ওষুধে যতটা না সুস্থ হবে, ডাক্তারদের সহানুভূতি এবং নার্সদের সেবা পেয়েই কিন্তু তার চেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে। তাদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।

“উন্নত সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে নিজেরও একটা আত্মতৃপ্তি আসবে।”

কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যারা স্বীকৃতি পেয়েছেন, তারা জনগণের সেবায় কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, “আপনাদের অর্জিত জ্ঞান আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। সকল ক্ষেত্রে যেমন বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে এই ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে, সেটাই আমি চাই।”

এ সময় তিনি সেবাধর্মের প্রতীক বিশ্বের খ্যাতনামা নার্স ও মানবসেবী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের জরিপ সংস্থা ‘গ্যালাপ’ এর একটি সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মত ২০২২ সালেও নার্সিং বিশ্বস্ত পেশার স্বীকৃতি পেয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় নার্স ও চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন, সে কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ও জাতির পিতা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং নির্যাতিত মা-বোনদের সুচিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ভারত ও আমেরিকা থেকে ডাক্তার ও স্পেশাল নার্স নিয়ে এসে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন।

সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নার্সিং পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছে এবং এই সরকারের মেয়াদে প্রায় ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, অভিজ্ঞতার জন্য চাকরির বয়সসীমাও শিথিল করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয় বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

এই খাতে বিভিন্ন উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, পুরাতন ২৩টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীত করে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স ও পোস্ট বেসিক কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া আরও ১৬টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীতকরণ প্রক্রিয়াধীন আছে।

সরকারি পর্যায়ে বর্তমানে ৬৯টি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা, বিএসসি বেসিক ও পোস্ট বেসিক ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। নার্সিং ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (নিয়েনার) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশের সরকারি স্বাস্থ্য সেবায় ৪৪ হাজার ৫৩৪ জন নার্স ও মিডওয়াইফ কর্মরত আছেন। দুই হাজার ৩৬৭টি শূন্য পদের বিপরীতে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স ও পাঁচ হাজার মিডওয়াইফের নতুন পদ সৃজন প্রক্রিয়াধীন আছে।

অন্যদের মধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌফিক বিন ইসমাইল, কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদের সভাপতি নরহাইজাম বিনতি মোহাম্মদ ও দ্বিতীয় ব্যাচের স্নাতক শিক্ষার্থী আনামুল হক বক্তব্য দেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নার্সিং কলেজটির ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

Loading

পোষ্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করতে পারেন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!