নিউজ ডেস্ক :
স্বপ্নপূরণ হল না দিল্লির। ফাইনালে একাধিপত্ব বজায় রেখে ম্য়াচ জিতল মুম্বই। তারুণ্যনির্ভর দিল্লি ক্যাপিটালসের সামনে ছিল প্রথম আইপিএল জয়ের হাতছানি। কিন্তু প্রতিপক্ষ যে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, সব মিলিয়ে শিরোপা রেকর্ড চারটি। সে কারণেই ফাইনালের আগে রোহিত শর্মা জানিয়েছিলেন, মাইন্ড গেমে হয়তো কিছুটা এগিয়ে আছে তারা। দুবাইয়ের ফাইনালে সেই পার্থক্যটাই স্পষ্ট হয়ে উঠলো। ‘ফাইনাল অভিজ্ঞ’ মুম্বাইয়ের সামনে আত্মসমর্পণ করতেই হলো শ্রেয়াস আইয়ারদের। সমান্তরালে দিল্লিকে হারিয়ে মুম্বাই জিতলো আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা।
আইপিএল ফাইনালে দেয়া হলো ৫৮ কোটি টাকার পুরস্কার। টুর্নামেন্টের প্রথম আসর থেকেই গ্ল্যামার ও অর্থের ছড়াছড়ি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেটে। যেখানে মাঠের ক্রিকেটে যেমন থাকে উত্তেজনা, তেমনি খেলার বাইরেও উপভোগ করার অনেক কিছু। আর মাঠের খেলায় ভালো করলে বড় অঙ্কের অর্থ পুরস্কার তো নিশ্চিতই। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার রুদ্ধদ্বার গ্যালারিতে হয়েছে আইপিএলের পুরো আসর। তাতে গ্ল্যামারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে খানিক। কিন্তু অর্থের ঝনঝনানি কমেনি একটুও। শুধু ফাইনাল ম্যাচেই দেয়া হয়েছে ৫১ কোটি ৩ লাখ রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৫৮ কোটি টাকা) অর্থ পুরস্কার। ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে দেয়া হয়েছে এ পুরস্কার।
১০ নভেম্বর ২০২০ ফাইনালে দিল্লিকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুললো মুম্বাই। গত বছর চেন্নাই সুপার কিংসকে হারানো ফ্র্যাঞ্চাইজিটি প্রথমবার জোড় বছরে জিতলো ট্রফি। এর আগে জেতা চার শিরোপা এসেছিল- ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে। অর্থাৎ, এক বছর বিরতি দিয়ে তাদের ঘরে উঠেছে ট্রফি। এবার সেই ধারা ভেঙে জোড় বছরে জিতলো আইপিএল।
ফাইনালের চাপ অন্যরকম। সেই চাপ অনেকটাই কমে গিয়েছিল দিল্লির টস জেতায়। দ্বিতীয়বার না ভেবে ব্যাটিং নেন অধিনায়ক আইয়ার। কিন্তু তাদের টপ অর্ডার সম্ভবত ফাইনালের চাপ নিতে পারেনি। সে কারণেই ২২ রান তুলতেই নেই ৩ উইকেট! ট্রেন্ট বোল্টের গতির সামনে দিশেহারা দিল্লির টপ অর্ডার। ইনিংসের প্রথম বলেই ফিরে যান মার্কাস স্টোইনিস (০)। কিউই পেসার খানিক পর ফেরান ওয়ান ডাউনে নামা আজিঙ্কা রাহানেকে (২)। তার সঙ্গে উইকেট উৎসবে যোগ দিয়ে জয়ন্ত যাদব প্যাভিলিয়নের পথ দেখান শিখর ধাওয়ানকে (১৫)।
বিপর্যস্ত দিল্লিকে পথে ফেরান অধিনায়ক আইয়ার ও ঋষভ পান্ত। চতুর্থ উইকেটে তারা ৯৬ রানের জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের ভিত গড়েন। দুজনই পূরণ করেন হাফসেঞ্চুরি। দারুণ ব্যাটিংয়ে পান্ত ৩৮ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৫৬ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলে ফেরেন।
তবে আইয়ার শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। যদিও চাহিদা অনুযায়ী রান তুলতে পারেননি। চাপ কাটিয়ে দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেওয়ার পথে দিল্লি অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৬৫ রানে। ৫০ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৬ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়। এছাড়া শিমরন হেটমায়ার ৫ ও অক্ষর প্যাটেলের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান।
দিল্লিকে অল্পতে আটকে রাখার পথে বোলিংয়ে দুর্দান্ত ছিল মুম্বাই। বল হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বোল্ট। কিউই পেসার ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট শিকার নাথান কোল্টার-নাইলের। আর একটি উইকেট পেয়েছেন জয়ন্ত।
১৫৭ রানের লক্ষ্যে মুম্বাইকে দারুণ শুরু এনে দেন রোহিত ও কুইন্টন ডি কক। রোহিত কিছুটা দেখেশুনে খেললেও আগ্রাসী ছিলেন ডি কক। দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনারের ১২ বলে ২০ রান করে বিদায় নেওয়ার আগে মুম্বাই উদ্বোধনী জুটি থেকে পায় ৪৫ রান। শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে রান বাড়ানোর কাজ করতে থাকেন রোহিত ও সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু দুইজনের ভুল বোঝাবুঝিতে ঘটে বিপত্তি!
ফাইনাল মঞ্চে রোহিত কতটা কার্যকর, সেটি জানা ছিল সূর্যকুমারের। তাই রোহিতকে নিশ্চিত রান আউট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিজেকে ‘বলি’ দেন তিনি। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ১৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সূর্যকুমার। সতীর্থের আত্মত্যাগের দাম দিতে আরও দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন রোহিত। মুম্বাই অধিনায়ক ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি করে আউট হন ৬৮ রানে। ৫১ বলের ইনিংসটি মুম্বাই অধিনায়ক সাজান ৫ চার ও ৪ ছক্কায়।
তিনি বিদায় নেওয়ার পর বাকি কাজটা সেরেছেন ঈশান কিষান। ১৯ বলে ৩ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় হার না মানা ৩৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই তরুণ। এর আগে কাইরন পোলার্ডের ৪ বলে করে যাওয়া ৯ রানের ইনিংসটিরও গুরুত্ব কম নয়। জয় থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে হার্দিক পান্ডিয়া (৩) আউট হওয়ার হতাশায় ডুবলেও তার ভাই ক্রুনাল পান্ডিয়ার (১*) ব্যাট থেকে এসেছে শিরোপা নিশ্চিত হওয়া রান।
গোটা টুর্নামেন্ট দারুণ বোলিং করা দিল্লি ফাইনালে এসে পারেনি। তাদের সবচেয়ে সফল বোলার আনরিখ নর্কিয়া ২৫ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন কাগিসো রাবাদা ও স্টোইনিস।
ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন বোল্ট। তবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন প্লে অফে উঠতে না পারা রাজস্থান রয়্যালসের পেসার জোফরা আর্চার।
এক নজরে ফাইনালে দেয়া পুরস্কার তালিকা:-
ম্যান অব দ্য ফাইনাল – ট্রেন্ট বোল্ট (৫ লাখ রুপি)
ইমার্জিং প্লেয়ার অব দ্য সিজন – দেবদূত পাড্ডিকাল (১০ লাখ রুপি)
ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার অব দ্য সিজন – জোফরা আর্চার (১০ লাখ রুপি)
গেমচেঞ্জার অব দ্য সিজন – লোকেশ রাহুল (১০ লাখ রুপি)
সুপারস্ট্রাইকার অব দ্য সিজন – কাইরন পোলার্ড (১০ লাখ রুপি)
সর্বোচ্চ ছক্কা – ইশান কিশান (১০ লাখ রুপি)
পাওয়ারপ্লেয়ার অব দ্য সিজন – ট্রেন্ট বোল্ট (১০ লাখ রুপি)
পার্পল ক্যাপ উইনার – কাগিসো রাবাদা (১০ লাখ রুপি)
অরেঞ্জ ক্যাপ উইনার – লোকেশ রাহুল (১০ লাখ রুপি)
ফেয়ারপ্লে এওয়ার্ড – মুম্বাই ইন্ডিয়ানস (অর্থ পুরস্কার নেই)
চতুর্থ স্থান – রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (৮.৭৫ কোটি রুপি)
তৃতীয় স্থান – সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (৮.৭৫ কোটি রুপি)
রানার্সআপ – দিল্লি ক্যাপিট্যালস (১২.৫০ কোটি রুপি)
চ্যাম্পিয়ন – মুম্বাই ইন্ডিয়ানস (২০ কোটি রুপি)
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দিল্লি ক্যাপিটালস: ২০ ওভারে ১৫৬/৭ (আইয়ার ৫৬, পান্ত ৫৬, ধাওয়ান ১১, অক্ষর ৯; বোল্ট ৩/৩০, কোল্টার-নাইল ২/২৯)।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৫৭/৫ (রোহিত ৬৮, ঈশান ৩৩*, ডি কক ২০, সূর্যকুমার ১৯; নর্কিয়া ২/২৫, স্টোইনিস ১/২৩)।
ফল: মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: ট্রেন্ট বোল্ট।
টুর্নামেন্টসেরা: জোফরা আর্চার।