নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। তখন মেধাতালিকায় ২০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ৪০ শতাংশ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার এই কোটা ব্যবস্থাটি পরিবর্তন করে সর্বশেষ ৫৫ শতাংশের কোটা করা হয়।
তবে বিভিন্ন বিসিএসের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেধাবীরা উত্তীর্ণ হয়েও একদিকে চাকরি পাননি, আর অন্যদিকে শত শত পদ শূন্য রয়ে গেছে। পিএসসির প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যাওয়ায় ২৮ থেকে ৩৮ তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে অন্তত ছয় হাজার পদ খালি ছিল। এমনকী, শুধু কোটার প্রার্থীদের নিয়েগের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেওয়া হলেও ওই বিসিএসেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮১৭টি, মহিলা ১০টি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২৯৮টি সহ মোট এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়। শুধু বিসিএস নয়, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য নিয়োগেও একই অবস্থা হয়।
এসব কারণে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে। এপ্রিলে সেই আন্দোলন দেশব্যাপী ব্যাপকতা লাভ করে। আস্তে আস্তে সেটি বাংলাদেশের প্রায় সবকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এরপর পুলিশ কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করে। তখন দেশবরেণ্য বিভিন্ন লেখক, শিক্ষক কোটা সংস্কার আন্দোলনকর্মীদের পাশে দাঁড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটা ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি বলে পরিচিত ছিল) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই সরকার আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে (৯ম থেকে ১৩তম) নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো কোটা বহাল নেই। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কোটার বিষয়ে আগের জারি করা পরিপত্র স্পষ্ট করার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সরকারি চাকরিতে অষ্টম বা তার ওপরের পদেও সরাসরি নিয়োগে কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
এই বিসিএসে কোটার পদ্ধতির বিষয়ে কী হবে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি বিলোপের মাসখানেক আগে ৪০ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি হলেও আমরা বলেছিলাম কোটা বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হবে। সরকার যেহেতু কোটা প্রথা বিলুপ্ত করেছে এখন থেকে পরবর্তী আর কোন বিসিএসে কোটা পদ্ধতি থাকছে না।