ভ্রমণ-আড্ডায় ইফতার জমে যেখানে

ভ্রমণ-আড্ডায় ইফতার জমে যেখানে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রমজানে ইফতারকে কেন্দ্র করে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। বিকেল হতেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দেখা যায় দলে দলে ইফতারের প্রস্তুতির দৃশ্য।

প্রতিদিনের আয়োজনের বাইরে সময়তে ঘটা করে আয়োজনও করতে দেখা যায়। শারীরিক কসরত, খেলাধুলা, আড্ডায় মুখরিত মাঠটিতে মাহে রমজানে ভিন্ন আমেজ বিরাজ করে।

পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে, একাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবনের দৈত্যাকার দুই দালানের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের একাংশ।

ঠিক এমন গোধূলি বেলায় শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। অন্যান্য দিনে ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা গানের আসরের দেখা মিললেও রমজান মাসের চিত্রটা ভিন্ন।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ততার শুরু। যেখানে প্রতিদিনের ব্যস্ততা বই-খাতা, আড্ডা, ক্লাসের জন্যে হন্যে হয়ে ছোটা কিংবা ক্লাস শেষে ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরার ঘটনা ঘটে। সেখানেই সবার অপেক্ষা মাগরিবের আজানের।

ইফতারের আগ দিয়ে কেউ কেউ ব্যস্ত ইফতারের অনুষঙ্গ তৈরিতে, কেউ ব্যস্ত প্রার্থনায়, কারও হাতে ছোলা, মুড়ি, চপ মাখানোর ব্যস্ততা, কেউ বানায় শরবত, কেউ কেউ ফল কাটে, কেউ আবার খাবার পানি, প্লেট-গ্লাস সাজায়।

সন্ধ্যা নামার আগেই দ্রুত পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাস চত্বরে প্রবেশ করছিলেন হাসিব মীর। ক্লান্তি উপেক্ষা করে একগাল হেসে বললেন, ‘সবার জন্য ইফতার নিয়ে আসলাম।

রমজানের এই দিনগুলোয় ৩২ একরের সবুজ চত্বর পরিণত হয় প্রাণের মিলনমেলায়। কেউবা বসার জায়গা পরিষ্কার করে আবার কেউ কেউ খাবার প্রস্তুত করে। পাশাপাশি খোশগল্পেও জমে উঠে ‘প্রাণের আড্ডা।

এমন আড্ডা মানেই তো বাঁধন হারা হাসির ফোয়ারা। অন্যান্য দিনের গুরুগাম্ভীর্য, নিজ ব্যাচ, বিভাগ, অনুষদ, সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাপিয়ে সবাই যেন এক ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের’ পরিচয়কেই তুলে ধরে এই দিনে।

সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শ্রাবনী ও সাব্বির। একপাশে বসে তরমুজ কাটায় বেশ ব্যস্ত দেখা যায় তাদের। তারা জানান, ‘সবদিনই তো পরিবারের সঙ্গে ইফতার করি। আজকে ক্যাম্পাসের সবাই মিলে ইফতার করবো।’

‘সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ইফতারের আগের সময়টুকু সবচেয়ে ভালো লাগার। সবাই মিলে ইফতার কিনতে যাওয়া, শরবত বানানো, প্রস্তুত করা, এসব খুবই আনন্দদায়ক।

ক্যাম্পাসের ইফতার যেন ক্যাম্পাসের অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উপমা। ইফতারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নিজ আগ্রহে সবার সঙ্গে কাজ করতেও দেখা যায় অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদেরকে।

বাদামতলায় সবার সঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায় সুপ্রভাত মণ্ডলকে। শরবতের মিষ্টতা যাচাইয়ের দায়িত্বটা তার। ছুড়ি দিয়ে শসা কাটতে কাটতেই বলেন, ‘সবার সাথে ইফতার করার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। সবকিছু ছাপিয়ে আমরা মানুষ। রোজার মাসে স্রষ্টার রহমত সবার উপর বর্ষিত হোক এই কামনা করি।’

কারও কারও এবার ক্যাম্পাসে শেষ ইফতার। স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো এত দিনের মধুর সময়গুলো। সবার মাঝে ইফতার ও পানির বোতল পরিবেশন করতে দেখা যায় আইন বিভাগের ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তাহমীদকে।

প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসের ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়েছেন তিনি। তাহমীদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে ইফতার করার ব্যাপারটা দারুণ রকমের সুন্দর। পরিবারের শূণ্যতা অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়।’

বেলা শেষে আজান হয়। ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে সবাই ইফতার করেন। তারপর নামাজের জন্যে ছুটে যাওয়া। হুল্লোড় শেষে ক্যাম্পাসে ফের পিনপতন নিরবতা। ফের এই নীরবতা ভেঙে ব্যস্ততা ফিরবে। তবে সন্ধ্যার মুগ্ধতা থেকে যাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণে।

Loading

পোষ্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করতে পারেন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!