নিউজ ডেস্ক:
তিন বছর আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছিল মাশরাফি মুর্তজাকে। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে একেবারেই আকস্মিকভাবে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক। মাশরাফি ফুরিয়ে গেছে, অন্তত কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে তাকে দিয়ে কিছু আর হবে না-এমন অনেক কথাই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বাতাসে। পরের তিন বছরে অবশ্য কুড়ি ওভারের অনেক ম্যাচ খেলেছেন, দলকে শিরোপা জেতাতেও ভূমিকা রেখেছেন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন অনুশীলনের বাইরে থাকা মাশরাফির পারফরম্যান্সে কোনও দল ফাইনালে যাবে, এমনটা কেউই ভাবতে পারেনি।
কিন্তু বাস্তবে তেমনটাই হয়েছে। সোমবার মাশরাফি তার টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিয়ে জেমকন খুলনাকে জিতিয়েছেন ৪৭ রানে। আর সোনায় মোড়া এই সাফল্যই তাকে এনে দিয়েছে ম্যান অব ম্যাচের পুরস্কার।
গত মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচ খেলেছিলেন মাশরাফি। এরপর দীর্ঘ বিরতি, অন্য ক্রিকেটাররা মাঠে ফিরলেও কোথাও ছিলেন না তিনি। গত অক্টোবরে প্রেসিডেন্টস কাপে খেলতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুশীলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয়, পড়েন চোটে। গত ১৮ অক্টোবর মিরপুরের সিটি ক্লাব মাঠে রানিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায় প্রেসিডেন্টস কাপে খেলার সম্ভাবনার ইতি ঘটে। এই চোট কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু টি- টোয়েন্টি কাপে ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিলেও চোটের কারণেই শুরুতে প্লেয়ার্স ড্রাফটে তার নাম ছিল না। সব বাধা কাটিয়ে জেমকন খুলনার জার্সিতে ৮ মাস ২২ দিন পর মাঠে ফেরার সুযোগ হয় মাশরাফির।
চোটমুক্ত হওয়ার পর মাশরাফিকে নিয়ে আগ্রহ দেখায় ৪ দল- ফরচুন বরিশাল, বেক্সিমকো ঢাকা, জেমকন খুলনা ও মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। একাধিক দল আগ্রহ প্রকাশ করায় লটারির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় তার দল প্রাপ্তি। লটারি ভাগ্যে মাশরাফিকে পায় জেমকন খুলনা। গত ৮ ডিসেম্বর গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ বিরতি ভাঙেন। আর সোমবার চট্টগ্রামের ইনিংস গুঁড়িয়ে দিতে শুরু থেকেই কার্যকর ভূমিকা রাখেন মাশরাফি। নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নেন সৌম্যকে। পুরো টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নেন সৌম্যকে। পরের ওভারেই ফেরান লিটনকে। বিস্ফোরক এই দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ১৫০ উইকেট পূর্ণ করেন মাশরাফি। সবমিলিয়ে ১৬৬ ম্যাচে তার ১৫৩ উইকেট। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উইকেট ৪২টি। এতদিন টি-২০ ক্রিকেটে মাশরাফির সেরা সাফল্য ছিল বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে রংপুরের জার্সিতে ১১ রানে ৪ উইকেট। সোমবার ৩৭ বছর বয়সী মাশরাফি নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। ৩৫ রান দিয়ে প্রথমবারের মতো পেয়েছেন ৫ উইকেট।
এমন সাফল্যের রহস্যটা আসলে কী? মাশরাফির জানালেন, ‘সাফল্যের কোনও রহস্য নেই। শুধু ভালো জায়গায় বল করে যাওয়া, এটাই। আট-নয় মাস পর মাঠে ফিরে ক্রিকেট খেলা সহজ ছিল না। আমার জন্য আদর্শ ছিল না। তবে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। শুধু নিজের জায়গাটায় বল করে যাওয়া, এটাই আমি অনেক বছর ধরে করে আসছি।
৩৭ বছর বয়সেও মানসিকভাবে ফিট থাকা কীভাবে সম্ভব? এবারও মাশরাফিসুলভ উত্তর দিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রেরণাদায়ী ক্রিকেট অধিনায়ক, ‘ক্রিকেট মানসিকতার খেলা। তবে সময়টা কঠিন ছিল। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর আমার পক্ষে ম্যাচ খেলা সহজ ছিল না। আমি ফিট হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। এরপর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ি। সত্যি কথা বলতে, আমি লেগে ছিলাম। আত্মবিশ্বাস ছিল এই টুর্নামেন্টটা খেলতে পারবো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, সেটাই হয়েছে। এরপর কিছু উইকেট পাওয়ায় নিজে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।