নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীদের বাধার মুখেই প্রথম দিনেই উচ্ছেদ করা হলো অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তিনশো দোকান।সোমবার বেলা দেড়টার দিকে অভিযান চালালে ব্যবসায়ী ও পুলিশের মাঝে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এসময় দফায় দফায় বিক্ষোভ, স্লোগানে নিজেদের দোকান রক্ষার দাবি জানাতে থাকেন তারা।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই থমথমে ফুলবাড়িয়া ও এর আশপাশের এলাকা। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মার্কেটের অবৈধ দোকান উচ্ছেদে আসবে, তা ঠেকাতে রাজপথে দোকানিরা। রণসাজে, সতর্ক প্রস্তুতি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীরও।
দফায় দফায় বিক্ষোভ, স্লোগানে নিজেদের দোকান রক্ষার দাবি জানাতে থাকেন তারা। সময়-গড়ায়, বাড়তে থাকে উত্তেজনা। উচ্ছেদের প্রস্তুতি শুরু করে প্রশাসন।
দুপুর পৌনে দুইটায় শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। ব্যবসায়ীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে শুরুতে কিছুটা পিছুহটে সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স সদর দফতর সংলগ্ন সড়কে রশি দিয়ে সড়ক আটকে অবস্থান নেয় পুলিশ । সড়কে অবস্থান নেয়া পুলিশের সামনে লোকজন অবস্থান নিলে এক পর্যায়ে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, যেকোন মূল্যে উচ্ছেদ অব্যাহত থাকবে।
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট দুই-এ এর আগে বিভিন্ন সময় নকশার বাইরে তোলা ৯১১টি দোকান অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয় করপোরেশন। ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০২০ এর মার্চ পর্যন্ত ভাড়া বাবদ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা আদায় করে দক্ষিণ সিটি। বৈধ ভাড়ার বাইরেও নানা সময় বিভিন্ন যুক্তিতে বিশাল অংকের টাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয় মালিক সমিতি। অভিযোগ আছে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের দিকেও।
রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট নকশা বর্হিভূত ৯১১টি দোকান উচ্ছেদে আজ অভিযান শুরু করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি। মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে দোকান ভাঙার কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ জানায়, আজ মঙ্গলবার মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। পর্যায়ক্রমে ৯১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান ভেঙে দেয়া হবে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বিপণিবিতানের নকশাবহির্ভূত দোকান এবং এর সার্বিক পরিস্থিতি জানতে একটি কমিটি গঠন করে দেন। করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি এই বিপণিবিতানে নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিত করে এসব উচ্ছেদের সুপারিশ করে। কমিটির সুপারিশে মেয়র সম্মতি দিয়ে নকশাবহির্ভূত এসব দোকান উচ্ছেদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে সোমবার থেকেই মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন দোকান মালিকরা। মার্কেটের গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত, সিঁড়ি, গলি, লিফটের জায়গায় নকশা বহির্ভূত এসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব অবৈধ দোকানের কারণে মার্কেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনিয়ম বন্ধ করতেই অবৈধ দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দোকান মালিকরা দাবি করেন, স্বল্প সময়ের নোটিশের কারণে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন তারা। অভিযানের আগে মালামাল গোছানোর জন্য আরো সময় দেয়ার দাবি জানান, মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, উচ্ছেদ না করে আপাতত এক মাস সময় দেয়ার জন্য তারা মেয়রের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু মেয়র তাদের অনুরোধ রাখেননি। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের মার্কেটের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় (এই তিনতলায় সংস্কারকাজ চলমান) দোকান বরাদ্দের অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে মেয়র তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
১৯৯৬ সালে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সময় পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান তৈরি করে তা অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে প্রশাসকের আমলে লিফটের জায়গায়, মানুষের হাঁটার জায়গায়, সিঁড়িতে এবং বিপণিবিতানের সামনের ফুটপাতের দোকান অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। পার্কিংয়ের জায়গায় যারা দোকান পেয়েছেন, তাদের করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়। কিন্তু ফুটপাতসহ অন্য জায়গায় নকশাবহির্ভূত দোকানগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তবে এসব দোকান থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে।