‘রাষ্ট্রচিন্তা’র দিদারুলের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা স্থগিত

‘রাষ্ট্রচিন্তা’র দিদারুলের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ‘রাষ্ট্রচিন্তা’র মো. দিদারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৩ মে) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।

২০২০ সালের ৫ মে দিদারুলকে নিজ বাসা থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে সেদিনই র‌্যাব- ৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুশতাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতাসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার পর গ্রেফতার হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় মুশতাক আহমেদ কাশিমপুর কারাগারে মারা যান।

২০২০ সালের ১০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আফছর আহমেদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জামিনের পর কারামুক্তি পান দিদারুল।

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করার আদেশ দেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। মামলার আসামিরা হলেন— হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি), সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনীম খলিল, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, ব্লগার আশিক মোহাম্মাদ ইমরান ও মো. ওয়াহিদুন্নবী, রাষ্ট্রচিন্তার মো. দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।

আসামিদের মধ্যে সামিউল ইসলাম খান, তাসনীম খলিল, আশিক মোহাম্মাদ ইমরান ও মো. ওয়াহিদুন্নবী মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর জামিনে ছিলেন। তবে বুধবার তিনি আদালতে হাজির হননি। আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

দিদারুল আলম ও মিনহাজ মান্নান জামিনে থেকে আদালতে হাজির হন। তাদের পক্ষে আইনজীবীরা অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।

মামলার অপর আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যাওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও ফেসবুক আইডি ফিলিপ শুমাখারকেও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টে আপিল করেন দিদারুল।

২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহসীন সর্দার প্রথম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেখানে কার্টুনিস্ট কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ও লেখক মুশতাককে অভিযুক্ত করা হয়।

অন্যদিকে, জুলকারনাইন ওরফে সামি, মিনহাজ মান্নান, আশিক মোহাম্মাদ ইমরান, তাসনীম খলিল ও মো. ওয়াহিদুন্নবীসহ আটজনের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছিল। মামলাটি পরে অধিকতর তদন্তে পাঠানো হয়। অধিকতর তদন্ত শেষে সাতজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

Loading

পোষ্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করতে পারেন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!