শত কোটি টাকার অনিয়মে এমআই সিমেন্ট; জরিমানা ৫০ লাখ

শত কোটি টাকার অনিয়মে এমআই সিমেন্ট; জরিমানা ৫০ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমআই সিমেন্ট থেকে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালকদের  বিভিন্ন কোম্পানিতে শত কোটি টাকার ওপরে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হয়েছে। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন না নিয়েই এ অর্থ দেয়া হয়। তৈরি করা হয়েছে পরিচালকদের ৬ টি ব্যক্তিগত কোম্পানি।

এ অপরাধে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানির পাঁচ পরিচালককে ১০ লাখ টাকা করে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, এমআই সিমেন্টে শেয়ারহোল্ডারের থেকে অনুমোদন না নিয়েই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৬ কোম্পানিতে বিনাসুদে টাকা দেয়া হয়েছে।

এতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে পরিচালকদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করা হয়েছে। তারপরেও সেই প্রদত্ত অর্থ অনিরাপদ এবং অর্থ ফেরতে নির্দিষ্ট কোনো শর্ত নেই বলে আর্থিক হিসাবে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে এমআই সিমেন্টের কোম্পানি সচিব মজহারুল ইসলামের দাবি পরিচালকদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিনা সুদে ঋণ দেয়া হয়নি। কোম্পানির জন্য পণ্য কিনতে অগ্রিম টাকা দেয়া হয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি তাদের ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উইথ দ্যা সিস্টার কনসার্ন’হিসাব শিরোনামে ৭০ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেখিয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে ইস্যুয়ার কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন ঋণ হিসেবে প্রদত্ত হয়েছে এবং উক্ত ঋণ প্রদানের পূর্বে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন নেয়া হয়নি।

এছাড়া কোম্পানির আগের বছরগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও সুদবিহীন ঋণ দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ইস্যুয়ার কোম্পানির পরিচালকদের শতভাগ মালিকানাধীন। এক্ষেত্রে কোম্পানি এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড কমিশনের প্রজ্ঞাপন (নং এসইসি/সিএমএমআরআরসিডি/২০০৬-১৫৯/অ্যাডমিন/০২-১০) লঙ্ঘন করেছে। যে কারণে কোম্পানির পরিচালকদের জরিমানা করা হয়েছে।

আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, পরিচালকদের ব্যক্তিগত ৬ কোম্পানিতে অর্থ প্রদান করে এমআই সিমেন্টের ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি ৯ লাখ টাকা। ৩১ মার্চ ২০২০ সালের প্রকাশিত হিসাবে, ইমপেয়ারম্যান্ট অ্যালাউন্স হিসেবে এই ক্ষতি দেখানো হয়েছে। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গঠন করা হয়েছে।

বিনাসুদে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ওই ৬ কোম্পানির মধ্যে চারটিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল এমআই সিমেন্ট থেকে। এর মধ্যে ক্রাউন পাওয়ারে ২০ লাখ টাকা, ক্রাউন মেরিনার্সে এক কোটি ৭২ লাখ টাকা, ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টসে পাঁচ লাখ টাকা এবং ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশনে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল।

ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টসে ও ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশনে বিনিয়োগের পুরোটা ২০১০-১১ অর্থবছরে করা হয়। এছাড়া ক্রাউন মেরিনার্সে নতুন করে এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। এ চার কোম্পানির মধ্যে ক্রাউন পাওয়ারে ৫০ শতাংশ ও অন্য কোম্পানিগুলোতে ২০ শতাংশ করে মালিকানায় বিনিয়োগ করা হয়।

এই চার কোম্পানির বিনিয়োগের মধ্যে লোকসানে ক্রাউন মেরিন ছাড়া বাকি ৩ কোম্পানির বিনিয়োগ শূন্য হয়ে যায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। তবে মেরিন ক্রাউন মুনাফা করে। যাতে এক কোটি ৭২ লাখ টাকার বিনিয়োগ ২০১৯ সালের ৩০ জুন বেড়ে দাড়িঁয়েছে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। এছাড়া ক্রাউন পাওয়ার মুনাফায় ফেরায় বিনিয়োগ ৮২ লাখ টাকা হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সদস্য বলেন, আইনের দুর্বলতার কারণে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি বড় অপরাধ করে ছোট শাস্তি পায়। এরপরও বলতে হচ্ছে সম্প্রতি এমআই সিমেন্টসহ একাধিক কোম্পানিকে জরিমানা করে নতুন কমিশন সহসের পরিচয় দিয়েছে। বিএসইসির এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে শেয়ারবাজারের ওপর আবার আস্থা ফিরে আসবে।

 

Loading

পোষ্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করতে পারেন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!