সবক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে

সবক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নারীরা সমাজের অর্ধেক। কোনো দেশ বা সমাজের উন্নতির জন্য শুধু পুরুষ নয়, সমাজের অর্ধশক্তি নারীকেও পুরুষের পাশাপাশি সমানভাব কাজ করতে হবে। নারী সমাজ থেকে আলাদা নয়।

নারী-পুরুষ মিলেই মানবসমাজ। একটি দেশ বা সমাজ উন্নয়নে নারীর অবদানকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আমাদের দেশে নারীর অতীত খুব সহজ-স্বাভাবিক অতীত নয়।

অতীতে নারীদের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। গৃহকোণই ছিল তার নির্ধারিত আবাস। নারীদের সর্বদা ছোট করে দেখা হতো। তাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ছিল না। আর সিদ্ধান্ত দিলেও তাদের সিদ্ধান্তের কোনো গুরুত্ব দেয়া হতো না।

সমাজের কোনো ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণের অধিকার ছিল না; এমনকি শিক্ষাক্ষেত্রেও তাদের অংশগ্রহণের অধিকার ছিল না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত হয়ে আসছে।

ধর্মীয় মূল্যবোধ বলতে ঘরের বাইরে না যাওয়াকেই বুঝত তারা। পুরুষের কুদৃষ্টির জন্য নারীসমাজ মুক্তি দেখেনি; বরং শাসন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দুর্ভাগ্যকেই বরণ করতে হয়েছিল তাদের। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অনুশাসনের ভয় দেখিয়ে গৃহবাসকেই নারীর একমাত্র আবাস বলে চিনিয়ে দিতে চেয়েছিল পুরুষ।

বস্তুত কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল আমাদের সমাজ। সমাজের অন্ধচোখ খুলে দিয়েছিল নারী নিজেই। সমাজের সব দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে চাপিয়ে নারী গৃহবন্দি থাকতে পারেনি।

অনেক প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে নারীসমাজ পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীর ভূমিকা ও অবদান স্বীকৃতি পেলেও কোনো কোনো উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি এখনও।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এখনও অবহেলিত। দেখা গেছে, শিক্ষার অভাবেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। পুরুষশাসিত প্রথাবদ্ধ সমাজে নারীরা শিক্ষাবৈষম্য, সামাজিক নিপীড়ন ও বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার। জনসংখ্যার অর্ধেক হলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্তরে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা খুবই সীমিত।

ব্যাপক সংখ্যক নারী এখনও গৃহের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও প্রথাবদ্ধ ধ্যান-ধারণার কারণে নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারছে না। তারা পুরুষের ওপর নির্ভরশীল।

হত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপের মতো নির্মম ঘটনার শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী। কোনো নারী ধর্ষণ বা নির্যাতিত হলে এখনও আমাদের সমাজ নারীর দিকেই আঙুল তুলে।

তাকেই প্রশ্ন করা হয়, কেন সে বাইরে বের হয়েছিল। তার যথাযথ পর্দা ছিল কিনা! সে কোন ধর্মের ইত্যাদি। এখনও গ্রাম্যসমাজে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ না হতেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ স্কুলে গেলে রাস্তায় বখাটেরা সমস্যা তৈরি করবে। এতে মেয়ের বদনাম হবে। বাবা-মা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না।

এসব ভেবে বাবা-মা অল্প বয়সেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকরের বিষয়টি স্বীকৃতি পেলেও পারিবারিক আইনে নারীর সার্বভৌমত্ব ও সমানাধিকার এখনও স্বীকৃত নয়।

বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রীয় পরিসরে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

Loading

পোষ্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করতে পারেন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!