নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চলতি বছরের জুনের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ করার পাশাপশি বাকি তিন সিটির ভোটও সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ময়মনসিংহের ভোটের ক্ষণগণনা ডিসেম্বরে শুরু হওয়ায় এই সিটির ভোট নিয়ে আপাতত পরিকল্পনা নেই সাংবিধানিক এ সংস্থাটির।
চলতি বছরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ নির্বাচনের ভোটের প্রস্তুতি নিতে হবে ইসিকে, যার ফলে সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হওয়ার প্রথম দিকে ভোট করতে চায় ইসি।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এসব কথা বলেন।
জুনের আগে আগে দুই-একটা সিটি করপোরেশনের ভোট হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন,‘বাকিগুলো জুনের পরে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিটি ভোট শেষ করব।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, কোনো সিটির মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর। কোনো সিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হয়।
সেক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির পরবর্তী ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হবে আগামী ১১ মার্চ। ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে খুলনা ও রাজশাহী সিটির ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৩ এপ্রিল। ১০ অক্টোবরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বরিশাল সিটি ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৪ মে থেকে ১৩ নভেম্বর। সিলেট সিটি ৬ মে থেকে পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে। ৬ নভেম্বরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ময়মনসিং সিটি ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০ ডিসেম্বর। ১৯ জুন ২০২৪ সালের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মো. আলমগীর বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি আমাদের। যেটা আলোচনা হয়েছিল গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট এইগুলোর নির্বাচনগুলো সেগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে করতে হয়।’
ইচ্ছা করলে ৬ মাসের শেষ করা যায়। মাঝামাঝি করা যায়, আগেও করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের জাতীয় নির্বাচন আছে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেজন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শেষের দিকে না করে প্রথম দিকে করা।’
জাতীয় নির্বাচনের জন্য অনেক বিষয়ে প্রস্তুতির ব্যাপার আছে জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এজন্য সেটাই করব। গাজীপুরের ব্যাপারে শুধু ওইটুকু আলোচনা হয়েছে। তফসিল কবে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয় নাই।’
১১ মার্চ থেকে ১০ সেপ্টম্বরে গাজীপুরে ভোটের সময় জানিয়ে কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘যে কোনো সময়ে নির্বাচন হতে পারে। সেই হিসেবে যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেজন্য নির্বাচনগুলো আর্লি (আগে) করার চেষ্টা করব। মার্চের পরে যে কোনো সময় নির্বাচন হতে পারে।’
চার সিটির ভোট একদিনে হবে কি না জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘একদিনে হবে না। ৬ টা সিটি আছে। তার মধ্যে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনেক দেরি। ওটাকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যে আনছি না। বাকি পাঁচটার ক্ষেত্রে হয়তো দুই দিনে হতে পারে। তিনদিনে হতে পারে।’
জুন মাসের মধ্যে দুই সিটি ভোট করার ইচ্ছা প্রকাশ করে এই কমিশনার বলেন, ‘করার ইচ্ছা আছে। তবে এখন পর্যন্ত দিন তারিখ ঠিক হয় নাই। চূড়ান্ত কিছু হয় নাই। যেগুলোর আগে ম্যাচিউরিটি (ক্ষণগণনা) শুরু হবে সেগুলো আগে হবে।’
গাজীপুরে স্থানীয়ভাবে তফসিল ঘোষণা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘গাজীপুর নিয়ে আমরা (কমিশন) কোনো তফসিল ঘোষণা করি নাই। জুনের আগে আগে দুই একটা সিটি ভোট হবে। বাকিগুলো জুনের পরে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিটি ভোট শেষ করব।’
সিটি নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘এগুলো নির্ভর করবে বাজেটের উপরে। আমরা বাজেট চাইব। টাকা পাইলে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করবো’
সিটি ভোটগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার আগ্রহ আছে জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘এটা ডিপেন্ড করবে। নতুন ইভিএম আসে নাই। ইভিএমগুলোর ব্যাটারির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। ব্যাটারির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সার্ভিসিং করাতে হবে। সে জন্য টাকা লাগবে। সার্ভিসিং করিয়ে যদি সচল করতে পারি তার ওপর নির্ভর করবে কতগুলো ইভিএম ব্যবহার করব। তবে কমিশনের ইচ্ছা ইভিএমে করা।’
সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর সিসি ক্যামেরা নির্ভর করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা ভোটের অনুষঙ্গ না। আইনে কোথাও বলা নাই সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। এটা বাড়তি ব্যবস্থা এবং পরীক্ষামূলক ছিল। টাকা পেলে সব আসনে না করলেও ঝুঁকিপূর্ণ আসনে করব।’
সিসি ক্যামেরা নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে বলে মনে করেন না এই কমিশনার। তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া পাই নাই। দলের কেউ মন্তব্য করতেই পারে। দলের সাথে সরকারের মন্তব্যের রিলেশন করা যাবে না। সরকার আর দল কিন্তু এক নয়।’