স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার দেওয়া সবার দায়িত্ব

স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার দেওয়া সবার দায়িত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

চলতি বছর অধস্তন আদালতের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণে কমিটি গঠনের পর বর্তমানে মামলা দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ বছরের প্রথম তিন মাস যেখানে মামলা নিষ্পত্তির হার ছিল ৮৫ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ ভাগে। দিনদিন নিষ্পত্তির হার বাড়ছে বলে জানান বিচার বিভাগের প্রধান।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা ছয়টি কোর্ট প্রযুক্তির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ তথ্য দেন। প্রযুক্তি ছয়টি হচ্ছে- সুপ্রিম কোর্ট মোবাইল অ্যাপ, মনিটরিং কমিটির অনলাইন রিপোর্টিং টুলস, আপিল বিভাগের ডিজিটাল অনুলিপি শাখা, আপিল বিভাগে প্রবেশ পাস, অনলাইনে অধস্তন আদালতের রায় ও আদেশ প্রকাশ এবং শিশু আদালতের রিপোর্ট এন্ট্রি প্ল্যাটফরম।

বিচারব্যবস্থায় তথ্য-প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আগামী দিনের বিচারব্যবস্থায় তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্ট অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, সেটা হলো স্বল্প সময় ও খরচে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। সে জন্য বিচারব্যবস্থাকে একটি তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমাদের সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে। একটি যুগোপযোগী ও গতিশীল বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে মামলা নিষ্পত্তির বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সেখানে দেখা যায়, বিভাগভিত্তিক মামলা নিষ্পত্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগের অধস্তন আদালতের নিষ্পত্তির ১৩০ ভাগ।

দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকরা ২০০০ সালের আগে দায়ের করা এক হাজার ৫৮১টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধস্তন আদালতে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৫টি দেওয়ানি মামলা হলেও নতুন এবং পুরনো মামলা মিলিয়ে নিষ্পত্তি হয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৯টি। নিষ্পত্তির হার ১০২ শতাংশ। তবে ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির হার শতভাগের নিচে। এই সময়ে অধস্তন আদালতগুলোতে ফৌজদারি মামলা হয়েছে আট লাখ ৪০ হাজার ৬০৪টি, নিষ্পত্তি হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৯টি। ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তির হার ৯৫ শতাংশ।
অধস্তন আদালতের পরিসংখ্যান তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি উচ্চ আদালতের মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তির পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৪১টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫০ হাজার ৯১০টি। নিষ্পত্তির হার ৭৯ শতাংশ।

প্রধান বিচারপতির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এবার সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ ভোগ না করে অনেক বিচারপতি বিচারিক কাজ করে গেছেন। অবকাশে হাইকোর্টের বিচারকরা ১৩৮টি ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) নিষ্পত্তি করেছেন।

মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তির পরিসংখ্যানের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের বিচার বিভাগের নানা উদ্যোগ, বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তাঁর লিখিত বক্তব্যে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী। এতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিনসহ বিভিন্ন আইন কর্মকর্তা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Loading

পোষ্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করতে পারেন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!