চলতি মাস শেষে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা
- আপডেটঃ ০২:৪১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৫১৯ বার পঠিত
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নগরীর দুই সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন স্তরে প্রশাসনিক শূন্যতায় মশক নিধন কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। ফলে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গু। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ এবং মৃত্যুর বেড়েছে দ্বিগুণের বেশ। কীটতত্ত্ববিদের আশঙ্কা, চলতি মাসেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী মাসে আরও বাড়তে পারে ডেঙ্গু সংক্রমণ।
তারা বলছেন, মেয়র, কাউন্সিলর এবং পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা না থাকায় মশক নিধন কর্মসূচিতে ভাটা পড়ছে। লার্ভিসাইড স্প্রে এবং ফগিংসহ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত মশা নির্মূল পদক্ষেপগুলোও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। কয়েক বছরের পর্যালোচনায় দেখা গেছে- বর্ষা মৌসুমের পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে।
গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬৫ জন। এদিন কারও মৃত্যু না হলেও আগের দিন মঙ্গলবার ৫ জনের মৃত্যু হয়। যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। তার আগের দিন সোমবার আক্রান্ত হয় ৬১৫ জন, যা চলতি বছরে একদিনে সবচেয়ে বেশি। ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১০২ জন। মৃতদের মধ্যে শূন্য থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে রয়েছে ৪৫ শতাংশ। মাসের ১১ দিনে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৩ হাজার জন। আগের মাস আগস্টে মৃত্যু হয় ২৭ জনের এবং আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৫২১ জন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। ঢাকার বাইরে থেকেও আসতে শুরু করেছে রোগী, যাদের অধিকাংশই জটিল শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসছেন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, এ মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে রোগীর চাপ আরও বাড়তে পারে। কারণ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রথমে অনেকেই বুঝতে পারে না। সেটি কম জ্বর কিংবা বেশি জ্বর হতে পারে। কিন্তু জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। দেরি করে হাসপাতালে এলে চিকিৎসকদের জন্য সেবা দিতে কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রচণ্ড জ্বর বা হাড়ভাঙা জ্বরসহ পেটে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড দুর্বলতা, বমি অথবা মাড়ি ও নাক থেকে রক্ত আসতে দেখলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙা রাস্তা-ঘাট, ডোবা-নালা, লিফ এক্সইল, গাছের ছিদ্র প্রভৃতি প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বিস্তৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে এডিস মশার ট্রান্সমিশন হচ্ছে। সাধারণত বর্ষা-পরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয়ে থাকে। মানুষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অবহেলা করছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে সিটি করপোরেশন কার্যক্রম কমে গেছে। ফলে এডিস মশা বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কারিগরিভাবে সঠিক ও বাস্তবায়নযোগ্য একটি কর্মকৌশল দ্রুত প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়ছে।
ডেঙ্গুর বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি- সিনিয়র সচিব : এদিকে গতকাল বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, ‘ডেঙ্গুর বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ঢাকার বেশিরভাগ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ডেডিকেটেড কর্নার করা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের জনবলকে ডেঙ্গু বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় আছে।’