বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ আয়কর আদায় করা যাবে: আপিল বিভাগ
- আপডেটঃ ০৫:২৩:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৫৯১ বার পঠিত
সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতেই হবে বলে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ।
আজ মঙ্গলবার ( ২৭ ফেব্রুয়ারী) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ে দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক ৪৫টি আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় বাতিল হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের প্রজ্ঞাপন দুটি বৈধ ও বহাল থাকল। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় করা যাবে।’
বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শতকরা ১৫ ভাগ হারে আয়কর আদায়ের জন্য ২০০৭ সালের ২৮ জুন ও ২০১০ সালের ১ জুলাই পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এক শিক্ষার্থীর করা পৃথক ৪০ টির বেশি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ওই দুই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শতকরা ১৫ ভাগ হারে রিট আবেদনকারী যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কর বাবদ অর্থ আদায় করা তা ফেরত দিতে সরকার ও এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ৪৫টি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ৪৫টি আপিল করে, যার ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী এবং আইনজীবী ওমর সাদাত ও সাখাওয়াত হোসেন।
রিট আবেদনকারী বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
রিট আবেদনকারী অপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ওমর সাদাত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল মঞ্জুর হয়নি, নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সুতরাং আপিল বিভাগ কোন দিক বিবেচনায় নিষ্পত্তি করেছেন-তা পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বলা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ২০০৭ সালের ২৮ জুন জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ‘সরকার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনর্নির্ধারণ করা হলো। মেডিকেল, ডেন্টাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্য শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রাইভেট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আয় করমুক্ত হইবে কিন্তু ওই সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিবছর যথারীতি নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে। ১ জুলাই ২০০৭ থেকে এটি কার্যকর হবে।’
এনবিআর ২০১০ সালের ১ জুলাই জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের ভাষ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবলমাত্র তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
ওই দুই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পৃথক রিট করা হয়। আইনজীবীদের তথ্যমতে, এর মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি রয়েছে।