তাপদাহে অস্থির জীবন, বাড়তে পারে হিট অ্যালার্ট
- আপডেটঃ ১০:৫৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
- / ৬৬২ বার পঠিত
দেশে পক্ষকালব্যাপী তীব্র দাবদাহ বইছে। যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ অনেক জেলার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে।পথেঘাটে বের হওয়া মানুষের মনে এখন এমন কথাই ধ্বনিত হচ্ছে। বৈশাখি এই গরমে অস্বস্তিতে নাজেহাল দেশের মানুষ। জেলায় জেলায় চলছে তাপপ্রবাহ। এমনকি, রাজধানী ঢাকাতেও তাপমাত্রা ৪০-এর আশেপাশে।
কাঠফাটা গরমে গলছে পিচ ঢালা পথ। ঘেমে-নেয়ে একাকার মানুষ। পশু-পাখিও খুঁজে নিচ্ছেন ছায়াতল। এ যেন মরুভূমির আবহাওয়া। তীব্র তাপদাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপদাহে। এমন পরিস্থিতিতে সুখবর তো নেই, উল্টো আবহাওয়া দপ্তর বলছে এমন অসহ্য গরম থাকতে পারে এপ্রিল জুড়েই।এজন্য চলমান ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্টের সময় আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এর মধ্যেই খবর এলো তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪২ ডিগ্রির ঘরে। রোববার বিকেল তিনটায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজধানীতে ওয়েদার ডটকমের তথ্য অনুযায়ী তাপমাত্রা দেখাচ্ছিলো ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে উল্লেখ ছিলো ‘ফিলস লাইক’ ৪২ ডিগ্রি। অর্থাৎ অতি তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ইট পাথরের জঞ্জাল আর দূষণের নগরী ঢাকাবাসী। রীতিমতো বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা।তীব্র গরমে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন নাজেহাল হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই কাজে বের হতে হচ্ছে তাদের। তপ্ত দুপুর আর তীব্র গরম। এমন হাঁসফাঁস অবস্থায় অনেকে যখন সুযোগ খুঁজছে অবসরের তখনো জীবিকার তাগিদে থেমে নেই রিকশার প্যাডেল।খেটে-খাওয়া এই মানুষগুলো বলছেন, রোদ বৃষ্টি বা তীব্র গরম যেটাই হোক জীবিকার তাগিদে তাদের বের হতেই হয়। তাই একটু ফুসরতেই যতোটা সম্ভব চেষ্টা চলে নিজের সুরক্ষার। হিট অ্যালার্টের মধ্যেও জীবিকার তাগিদে কাজে নামতে হয়েছে শ্রমজীবী মানুষকে। নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি জেনেও কাজে বেরিয়েছেন তারা।
গরমের এত তীব্রতার পরও কোনো সুখবর নেই আবহাওয়া অফিসের। বরং এপ্রিল জুড়ে গরম আরও বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। নেই সহসা বৃষ্টির সম্ভাবনাও। সাংঘাতিক বার্তাও এসেছে। তাপদাহ মে মাসেও থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আরও অসহনীয় হয়ে উঠবে আবহাওয়া।আবহাওয়া অফিস বলছে পুরো এপ্রিল জুড়েই থাকতে পারে গরমের এমন তীব্রতা। তবে আগামী তিনদিন পর সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এরপর আবারও বাড়বে তাপদাহ। ভারতের পশ্চিমে বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা কমবে না। সামনের দিনে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৪ ডিগ্রিতে ওঠানামা করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের বেশকিছু জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আগামী আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে এই সময়ে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
অন্যদিকে, আগামী ৫ দিনেও আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
ইতোমধ্যে দেশের ১২ জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমানে পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রাজশাহী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর, রাঙ্গামাটি জেলাসহ বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও এসব অঞ্চলে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি। পাশাপাশি শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবার সম্ভাবনাও দেখছেন আবহাওয়াবিদরা।
চলমান তাপদাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে তাপদাহ বাড়লে ছুটি আরও বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হবে।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন আরও জানান, তীব্র তাপদাহের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাচ্চা ও বয়স্ক মানুষদের প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এই গরমে সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল বয়স্ক এবং বাচ্চারা। এবার এমন একটা জলবায়ু পরিবর্তন হলো যে, আমরা জীবনে কখনো শুনিনি যে দুবাই বিমানবন্দর পানিতে ডুবে গেছে। যাই হোক এটা প্রকৃতির নিয়ম। আমাদের এগুলো মোকাবিলা করতে হবে।
তীব্র তাপদাহে বাচ্চাদের ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে যখন মেসেজ আসলো (হিট অ্যালার্ট), আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে গিয়ে স্কুলটা বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। কারণ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে বাচ্চা এবং বয়স্করা।এদিকে, তীব্র তাপদাহে সবচেয়ে সঙ্গীন অবস্থা চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার মানুষরা। রোববার বিকেল তিনটায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
দুই জেলার বাসিন্দারা বলছেন, তাদের স্মরণকালে এতো গরম দেখেননি। ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নেই।