ঢাকা , সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মশা নিধনে তৎপর না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে

অনলাইন নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটঃ ১১:৪১:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
  • / ৫৬৯ বার পঠিত

বর্ষা মৌসুম শুরু না হলেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি বছর শুরুর দুই মাসেই ডেঙ্গুজ্বরে প্রাণ গেছে ২০ জনের, যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকঠাক মশা নিধন না করলে এবার পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। ভেঙে যেতে পারে গত বছরের প্রাণহানির রেকর্ড। এই অবস্থায় প্রয়োজন জোর প্রস্তুতি।

 

গেল বছর ডেংগুতে মৃত্যুর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। ৬৪ জেলা ভুগেছে বছরজুড়ে। তবে ২০২৩ সালের আগের ২২ বছরে, এ জ্বরে মারা যায় ৮শ’ ৬৮ জন। সেসব রেকর্ড ভেংগে যায় ১ বছরেই। প্রাণ গেছে ১ হাজার ৭শ’ ৫ জনের।সমীকরণ ছিলো এ বছর আরও ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। যার আভাস মিলেছে সরকারি তথ্যেও। ১৩ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পনেরশ। অথচ এক বছর আগেই মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ৯, আক্রান্ত ৭শ’ ৮২ জন।

 

এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের প্রস্তুতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ফোনে বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে অত্যন্ত সজাগ আছি। ইতোমধ্যে একটি মিটিংয়ের আহ্বান জানিয়েছি, যেখানে শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবাই থাকবে। এই মিটিংটি অতিসত্বরই হবে।গ্রাম কিংবা শহর, গতবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যায় বাদ পড়েনি কোন অঞ্চল। তাই এবার প্রস্তুতিটাও নিতে হবে আঁটসাঁট বেঁধে বলে পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের যত ওয়ার্ড রয়েছে, ওই ওয়ার্ডগুলো যদি ভাগ করা হয় যেমন, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, মধ্য ঝুঁকিপূর্ণ, নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকি নেই। অতএব, এই ৪টি ভাগে ভাগ করলে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ যেসব এলাকা, সেসব জায়গায় প্রচুর কাজ করতে হবে। মধ্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও অনেক কাজ করতে হবে। নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় একটু কম কাজ করলেও হবে।

 

এদিকে আইইডিসিআর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, মশক নিধন খুবই দরকার এবং সেটা সামগ্রিকভাবে পাড়ায়-পাড়ায়, গ্রামে-গ্রামে, মহল্লায়-মহল্লায় মানুষকে সম্পৃক্ত করে আমাদের পরিবেশকে পরিছন্ন করতে হবে। এছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা তো আছেই, স্তরভিত্তিক বিন্যাস ও কেন্দ্রীভূত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা।

 

উল্লেখ্য, এ বছরের প্রথম ২ মাসের মধ্যেই ডেঙ্গুজ্বরে বেশি সংখ্যায় মারা গেছেন শিশু ও নারীরা। আক্রান্তে এবার পুরুষের সংখাও বেশি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে আলাদা দফতর খুলে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে কাজ করার তাগিদ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

 

আইইডিসিআর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন আরও বলেন, একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় টাস্ক ফোর্স, কেবিনেট ডিভিশনের প্রশাসনিক সমন্বয় এবং রাজনৈতিক সমন্বয়টা করতে হবে একজন সিনিয়ার মন্ত্রীকে নিয়ে। মন্ত্রী দফতরবিহীন হলে ভালো হয়। সমালোচনা করার চাইতে, আগে থেকেই আমাদের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় নামা উচিত।

 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ আরও জানান, এক দেশ, এক স্বাস্থ্য। ম্যালেরিয়া রোগটি যদি স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ন্ত্রন করে থাকে, তাহলে ডেঙ্গু কেন নয়! যদি আমরা স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়িত্ব দেই, তাহলে গত ২০ বছরে যতটা নিয়ন্ত্রন হয়নি, আগামী ১০ বছরে তা নিয়ন্ত্রন করা যাবে।লোক দেখানো অভিযান নয়, মশার প্রজনন ধ্বংসে দরকার আন্তরিকতা; লাগবে জনসচেতনতাও।

অর্থআদালতডটকম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

error: Content is protected !!

মশা নিধনে তৎপর না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে

আপডেটঃ ১১:৪১:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

বর্ষা মৌসুম শুরু না হলেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি বছর শুরুর দুই মাসেই ডেঙ্গুজ্বরে প্রাণ গেছে ২০ জনের, যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকঠাক মশা নিধন না করলে এবার পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। ভেঙে যেতে পারে গত বছরের প্রাণহানির রেকর্ড। এই অবস্থায় প্রয়োজন জোর প্রস্তুতি।

 

গেল বছর ডেংগুতে মৃত্যুর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। ৬৪ জেলা ভুগেছে বছরজুড়ে। তবে ২০২৩ সালের আগের ২২ বছরে, এ জ্বরে মারা যায় ৮শ’ ৬৮ জন। সেসব রেকর্ড ভেংগে যায় ১ বছরেই। প্রাণ গেছে ১ হাজার ৭শ’ ৫ জনের।সমীকরণ ছিলো এ বছর আরও ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। যার আভাস মিলেছে সরকারি তথ্যেও। ১৩ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পনেরশ। অথচ এক বছর আগেই মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ৯, আক্রান্ত ৭শ’ ৮২ জন।

 

এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের প্রস্তুতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ফোনে বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে অত্যন্ত সজাগ আছি। ইতোমধ্যে একটি মিটিংয়ের আহ্বান জানিয়েছি, যেখানে শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবাই থাকবে। এই মিটিংটি অতিসত্বরই হবে।গ্রাম কিংবা শহর, গতবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যায় বাদ পড়েনি কোন অঞ্চল। তাই এবার প্রস্তুতিটাও নিতে হবে আঁটসাঁট বেঁধে বলে পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের যত ওয়ার্ড রয়েছে, ওই ওয়ার্ডগুলো যদি ভাগ করা হয় যেমন, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, মধ্য ঝুঁকিপূর্ণ, নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকি নেই। অতএব, এই ৪টি ভাগে ভাগ করলে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ যেসব এলাকা, সেসব জায়গায় প্রচুর কাজ করতে হবে। মধ্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও অনেক কাজ করতে হবে। নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় একটু কম কাজ করলেও হবে।

 

এদিকে আইইডিসিআর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, মশক নিধন খুবই দরকার এবং সেটা সামগ্রিকভাবে পাড়ায়-পাড়ায়, গ্রামে-গ্রামে, মহল্লায়-মহল্লায় মানুষকে সম্পৃক্ত করে আমাদের পরিবেশকে পরিছন্ন করতে হবে। এছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা তো আছেই, স্তরভিত্তিক বিন্যাস ও কেন্দ্রীভূত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা।

 

উল্লেখ্য, এ বছরের প্রথম ২ মাসের মধ্যেই ডেঙ্গুজ্বরে বেশি সংখ্যায় মারা গেছেন শিশু ও নারীরা। আক্রান্তে এবার পুরুষের সংখাও বেশি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনে আলাদা দফতর খুলে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে কাজ করার তাগিদ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

 

আইইডিসিআর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন আরও বলেন, একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় টাস্ক ফোর্স, কেবিনেট ডিভিশনের প্রশাসনিক সমন্বয় এবং রাজনৈতিক সমন্বয়টা করতে হবে একজন সিনিয়ার মন্ত্রীকে নিয়ে। মন্ত্রী দফতরবিহীন হলে ভালো হয়। সমালোচনা করার চাইতে, আগে থেকেই আমাদের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় নামা উচিত।

 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ আরও জানান, এক দেশ, এক স্বাস্থ্য। ম্যালেরিয়া রোগটি যদি স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ন্ত্রন করে থাকে, তাহলে ডেঙ্গু কেন নয়! যদি আমরা স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়িত্ব দেই, তাহলে গত ২০ বছরে যতটা নিয়ন্ত্রন হয়নি, আগামী ১০ বছরে তা নিয়ন্ত্রন করা যাবে।লোক দেখানো অভিযান নয়, মশার প্রজনন ধ্বংসে দরকার আন্তরিকতা; লাগবে জনসচেতনতাও।