ঢাকা , সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম কালবৈশাখীর এবারের এপ্রিলে

অনলাইন নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটঃ ০৩:২৫:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৫৯৫ বার পঠিত

দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয় মে মাসে। এরপর আছে জুন, সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল মাস। কিন্তু এবার এই ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মাত্র একটি বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী হয়েছে। তাও হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। সেটাও অস্বাভাবিক। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৯৮১ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রঝড়ের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা প্রকৃতির এ আচরণকে অস্বাভাবিক বলছেন।

 

গত বছরের এপ্রিলে বজ্রঝড় হয়েছিল সাতটি। ২০২২ ও ২০২১ সালে হয় যথাক্রমে ৯টি ও আটটি। আর এ বছর মাত্র একটি।এই এপ্রিল মাসে গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ ছিল। গণমাধ্যমকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি। এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। এবার ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে গেল।’

 

এই তাপপ্রবাহের মাসে বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর সংখ্যা গেছে কমে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ১৯৮১ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের উপাত্ত তুলে ধরেছেন তার গবেষণায়। এই ৪৩ বছরে এপ্রিল মাসে ৩৬৫টি বড় বজ্রঝড় হয়। সবচেয়ে বেশি ঝড় হয়েছিল ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে, ১৪টি। আর ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে সবচেয়ে কম চারটি করে ঝড় হয় এপ্রিলে।

 

দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয় মে মাসে। এর পর আছে জুন, সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল মাস। কিন্তু এবার এই ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মাত্র একটি বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী হয়েছে। তাও হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। সেটিও অস্বাভাবিক।

 

এপ্রিল মাসে ঝড় কমে যাওয়ায় অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহকেই কারণ মনে করেন বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম। তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত।

 

তিনি বলেন, তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এ বছরের এপ্রিল ভারতে ১২২ বছরের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। আমাদের যে বায়ুপ্রবাহ তার সঙ্গে সীমান্তসংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উডিষ্যার সম্পর্ক আছে। এ সময় এসব অঞ্চলে সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প বজ্র মেঘের সৃষ্টি করে। কিন্তু এবার ভারতের ওই সব অঞ্চলেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আর্দ্রতাপূর্ণ জলীয় বাষ্প জড়ো হয়ে বজ্র মেঘ সৃষ্টি করেনি। তাতেই এ বিড়ম্বনা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ অবস্থা দেখছি আমরা।

 

কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, এখন বৃষ্টি না হওয়ায় যেসব ধান মাঠে আছে এবং পুষ্ট হয়নি সেগুলো চিটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। নিজের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আম গাছের নিচে ছড়িয়ে আছে গুটি। বাগানিরা গোড়ায় পানি দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। ওপর থেকে বৃষ্টি চাই। তা হচ্ছে না।’

 

এ সময় পানি পেলে বাড়ত ব্যাঙাচি এবং গঙ্গা ফড়িং। এ দুইই মশা খায়। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যাঙাচি এবং গঙ্গা ফড়িংয়ের বংশ বিস্তার কম হতে পারে। ফলে মশার উপদ্রব আগামীতে বাড়তে পারে বলে মনে করেন মৃত্যুঞ্জয় রায়।

অর্থআদালতডটকম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

error: Content is protected !!

৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম কালবৈশাখীর এবারের এপ্রিলে

আপডেটঃ ০৩:২৫:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয় মে মাসে। এরপর আছে জুন, সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল মাস। কিন্তু এবার এই ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মাত্র একটি বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী হয়েছে। তাও হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। সেটাও অস্বাভাবিক। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৯৮১ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত বজ্রঝড়ের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা প্রকৃতির এ আচরণকে অস্বাভাবিক বলছেন।

 

গত বছরের এপ্রিলে বজ্রঝড় হয়েছিল সাতটি। ২০২২ ও ২০২১ সালে হয় যথাক্রমে ৯টি ও আটটি। আর এ বছর মাত্র একটি।এই এপ্রিল মাসে গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ ছিল। গণমাধ্যমকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি। এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। এবার ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে গেল।’

 

এই তাপপ্রবাহের মাসে বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর সংখ্যা গেছে কমে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ১৯৮১ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের উপাত্ত তুলে ধরেছেন তার গবেষণায়। এই ৪৩ বছরে এপ্রিল মাসে ৩৬৫টি বড় বজ্রঝড় হয়। সবচেয়ে বেশি ঝড় হয়েছিল ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে, ১৪টি। আর ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে সবচেয়ে কম চারটি করে ঝড় হয় এপ্রিলে।

 

দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয় মে মাসে। এর পর আছে জুন, সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল মাস। কিন্তু এবার এই ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মাত্র একটি বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী হয়েছে। তাও হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। সেটিও অস্বাভাবিক।

 

এপ্রিল মাসে ঝড় কমে যাওয়ায় অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহকেই কারণ মনে করেন বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম। তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত।

 

তিনি বলেন, তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এ বছরের এপ্রিল ভারতে ১২২ বছরের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। আমাদের যে বায়ুপ্রবাহ তার সঙ্গে সীমান্তসংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উডিষ্যার সম্পর্ক আছে। এ সময় এসব অঞ্চলে সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প বজ্র মেঘের সৃষ্টি করে। কিন্তু এবার ভারতের ওই সব অঞ্চলেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আর্দ্রতাপূর্ণ জলীয় বাষ্প জড়ো হয়ে বজ্র মেঘ সৃষ্টি করেনি। তাতেই এ বিড়ম্বনা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ অবস্থা দেখছি আমরা।

 

কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, এখন বৃষ্টি না হওয়ায় যেসব ধান মাঠে আছে এবং পুষ্ট হয়নি সেগুলো চিটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। নিজের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আম গাছের নিচে ছড়িয়ে আছে গুটি। বাগানিরা গোড়ায় পানি দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। ওপর থেকে বৃষ্টি চাই। তা হচ্ছে না।’

 

এ সময় পানি পেলে বাড়ত ব্যাঙাচি এবং গঙ্গা ফড়িং। এ দুইই মশা খায়। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যাঙাচি এবং গঙ্গা ফড়িংয়ের বংশ বিস্তার কম হতে পারে। ফলে মশার উপদ্রব আগামীতে বাড়তে পারে বলে মনে করেন মৃত্যুঞ্জয় রায়।